Logo

সাহিত্য সংস্কৃতি    >>   “ যে তিতা সত্য গিলতেই হবে “

“ যে তিতা সত্য গিলতেই হবে “

“ যে তিতা সত্য গিলতেই হবে “

“ যে তিতা সত্য গিলতেই হবে “
মৃদুল আহমেদ 

১.

যেকোনো সরকারের আমলে যেকোনো গণহত্যার দায় সেই সরকারের ওপরেই বর্তায়। এখন সেটা নিজ নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিসের ছোঁড়া গু-লি হোক, বিদেশি মদদে অপশক্তির স্নাইপারের গু-লি হোক, যা কিছু যত কিছু হ-ত্যা হয়েছে, প্রতিটি মৃ-ত্যুর দায় সেই সরকারের।
ষড়যন্ত্র যদি হয়ে থাকে, সেটা ঠেকাতে না পারাও সরকারের গোয়েন্দা বিভাগের ব্যর্থতা।
৫ আগস্টের আগপর্যন্ত ২০২৪-এর গণহ-ত্যার দায় পুরোপুরি আওয়ামী লীগের।  

মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে কথা বলা আওয়ামী লীগকে মৌন বা সরব সমর্থন জানানো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সপক্ষের প্রতিটি মানুষকে এই তিতা সত্য গিলতেই হবে। 

২.
জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও ব্যক্তিস্বার্থ এবং ব্যক্তিলালসা কত দূর চূড়ান্ত পর্যায়ে যেতে পারে, ড. ইউনুস তার জ্বলন্ত উদাহরণ। 
স্রেফ ক্ষমতায় যাবার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়া, জঙ্গিদের সাথে সখ্যতা তৈরি, গুপ্তহত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করে বাঙালির রক্ত হাতে মাখতেও দ্বিধা করেন নি তিনি। 
এটি আমার দেয়া কোনো ভার্ডিক্ট নয়। এর অর্ধেক মোটামুটি তিনি নিজের মুখেই স্বীকার করে নিয়েছেন, বাকি অর্ধেক তিনি ক্ষমতা থেকে যাবার পরে প্রমাণিত হবে। 
ডক্টর ইউনুসের নিজের মুখের স্বীকারোক্তির পরও যারা তাঁর ছায়াতলে নতুন দেশের স্বপ্ন দেখেন তারা বোকার স্বর্গের সর্বোচ্চ অট্টালিকার সবচেয়ে আরামদায়ক সোফাটিতে ঘুমিয়ে আছেন।

এই সরকার জঙ্গিবন্ধু সরকার। স্বাধীনতার বিরোধী পক্ষ শক্তির সরকার।
তারা আয়নাঘর পরিদর্শনে গেলেও তাদের পাশে অন্য কোনো ভিকটিমকে দেখা যায় না। ঘুরঘুর করে শুধু গোলাম আযম আর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পুত্ররাই।

সত্যিকার মুক্তচিন্তার মানুষ যারা আওয়ামী লীগের বিকল্প হিসেবে ইউনুসের পতাকাতলে দাঁড়িয়ে এখন জাতির সম্ভ্রম ক্ষণে ক্ষণে ভূলুণ্ঠিত হতে দেখে কপালে হাত দিয়ে বসে আছেন, তাদেরকে এই তিতা সত্য গিলতেই হবে।  

৩. 
এই দেশের অধিকাংশ মানুষ আসলে কারা?
যারা শেখ হাসিনার পুলিস বাহিনীর থেকেও অনেক বড় খু-নি দল। 
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালানো এবং হরতালে বাস পুড়িয়ে মানুষ মারা খালেদা জিয়ার দলের চেয়েও অনেক নিষ্ঠুর, লুটেরা, খুনি এবং অসভ্য আমাদের আপামর বাঙালি সমাজের বড় একটা অংশ। বাকির তাদের মৌন সমর্থক। 

৫ আগস্টের পর থেকে লাগাতার গণহ-ত্যা, লুটতরাজ, অজস্র লাশ রাস্তার মোড়ে মোড়ে দড়ি বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা এবং সেই দৃশ্য উপভোগ করা মানুষগুলোই তার প্রমাণ।

এমন খুনে, লুটেরা, হিংস্র জাতির নেতৃত্বে খু-নিরাই বারে বারে আসবে সন্দেহ নেই।
খু-নিদের দলনেতা খু-নিই হয়। 
বাংলাদেশের নেতৃত্বে ফেরেশতাকে বসিয়ে দিলে সেও শয়তান হয়ে যাবে। 

এই তিতা সত্য বাঙালিকে গিলতেই হবে।

৪.
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও একমাত্র আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে কিছু কথা বলত বিধায় প্রগতিশীল ঘরানার সমস্ত মানুষদেরই কমবেশি মৌন সমর্থন পেয়েছিল। 

তারা সেই সমর্থনকে নানাভাবে ব্যবহার করেছে। দুর্নীতি, দলীয়করণ, গণহ-ত্যা বিবিধ অভিযোগে জনতা শেষপর্যন্ত তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে।
কিন্তু আওয়ামী লীগের পরে এখন পর্যন্ত এমন কোনো দল পাওয়া গেল না, যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে যথাযথভাবে কথা বলে। 

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী কিন্তু এন্টি আওয়ামী প্রত্যেক মানুষকেই এই তিতা সত্য গিলতেই হবে। 

৫.
রাজনীতি সবারই বুঝতে হয়। তবে সবার করতে হয় না।
বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতি বোঝে না, কিন্তু সবাই রাজনীতি করে। 
কোটাকেন্দ্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারকে যে পরিমাণ ধরাশায়ী করা গিয়েছিল, সেটিই জনগণের এক বিশাল জয় ছিল, সরকারের জন্য ছিল লজ্জাজনক পরাজয়।

কিন্তু সরকার উৎখাত করতে চাওয়াটা ছিল জনগণের একটি বিশাল রাজনৈতিক ভুল পদক্ষেপ। বাংলাদেশের মতো একটি উচ্ছৃঙ্খল ও বদমাশ জনগোষ্ঠীকে সামাল দেয়ার মতো নেতা খুঁজে বের করা সহজ কথা নয়। 
বদমাশ জনগোষ্ঠীর সরকার বদমাশই হবে, এটা ধরে নিয়েই অপেক্ষাকৃত কম বদমাশ ও সুযোগ্য সরকারকে ধরে রাখাটাই ছিল জনগণের জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পন্থা।
 
কোটা আন্দোলনে জয়ের পরবর্তি পদক্ষেপ হিসেবে লীগ সরকারের কাছ খেকে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করতে পারাটাই ছিল জনগণের জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার। আন্দোলনের শক্তিকে সরকার উৎখাতের দিকে চালিত না করে নতুন সরকার গঠনের প্রক্রিয়ার দিকে চালিত করাটাই হত জনগণের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ।

তা না হয়ে সমন্বয়ক, বিপ্লবী ছাত্রনেতাদের বিবিধ উল্লম্ফনের পাশাপাশি দেশজুড়ে মৌলবাদের উৎপাত, যার যেমন ইচ্ছে খু-ন, যখম, রাহাজানি, ছিনতাই, দলবাজি এসব যত্রতত্র দেখতে হত না। 
আগস্টের পাঁচের পর থেকে যে হ-ত্যা এবং প্রতিশোধের ধারা বহমান তা এখনো থামে নি। আর থামবেও না। আগামি ১০০ বছর এভাবেই সরকারের পালাবদল ও খু-ন পাল্টা খু-ন চলতে থাকবে। শীর্ষ নেতারা কেউ জেলে যাবে, কেউ জামিন নেবে, কেউ দলবদল করবে। প্রাণে কেউ মরবে না। 
প্রাণে মরবে দিনশেষে সাধারণ জনগণই। লীগ সরকার মেরেছে যার ভাইকে, জঙ্গিবন্ধু সরকার মেরেছে তার বন্ধুর ভাইকে। এই তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতেই থাকবে। কোনো মৃত্যুই কি মেনে নেওয়া যায়? সব মৃত্যুই তো কষ্টকর। 

গণতন্ত্রের নামে ব্যবহৃত হতে থাকা জনগণ এবার বিপ্লবের নামে ব্যবহৃত হল এই যা।
বাড়তি হিসেবে জীবনে যুক্ত হল ধারাবাহিক রক্তক্ষয়, চাকরির বাজারে ধ্বস, মুখ থুবড়ে পড়া অর্থনীতি, গার্মেন্টস শিল্পের বারোটা। 
এই তিতা সত্যের নির্যাস জাতিকে গিলতেই হবে। 

মৃদুল আহমেদ 
লেখক , নিউইর্য়ক ।